in ,

করোনাকালীন শিক্ষা ভাবনা: প্রেক্ষিত উচ্চশিক্ষা

প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রুগী সনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তখন থেকেই আতংকিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষত উচ্চশিক্ষায়তনের শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ করে দেয়ার চাপ ছিল। সরকারের সমালোচনা, সরকারের প্রতি তির্যক মন্তব্য, ট্রল করাসহ সম্ভাব্য সকল পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার চাপ প্রয়োগের জন্য। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উদ্বেগ, উৎকন্ঠার বিষয়টিও সরকার বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয়। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ ছুটি ঘোষণা করে যা অদ্যাবধি অব্যাহত আছে। এক বছরের বেশী সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ থাকায় স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা রকাম নেতিবাচক প্রভাব কাজ করছে। ইতোমধ্যে একটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করে ‘অটোপাস’ প্রদান করা হয়। পরবর্তী শিক্ষা বর্ষের একটি সেমিস্টার অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের উ্চ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তির বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। আশার কথা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়টি বর্তমানে (করোনাকালীন সময়েও) চলমান রয়েছে।

বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা মোতাবেক আগামী ২৩ মে থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা রয়েছে (আরও বাড়ানো হয়েছে)। অন্যদিকে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সে ঘোষণানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব কিনা তা পুণ:বিবেচনার প্রয়োজন হতে পারে। এমতাবস্থায় বিকল্প পন্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ চালু রাখা বা পাঠদান অব্যাহত রাখার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সকলকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রদানের সরকারী কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে পারলে করোনার ভয়াবহতা নিয়ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যায়।

আমরা ইতোমধ্যে এক বছরের বেশী সময় অতিক্রম করেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোন কাযকরী বিকল্প ভাবনা ছাড়াই যার মাসুল আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে হবে। আমাদের আর বসে থাকার সময় নেই। এ মহামারীর মধ্যেও আমাদের বিকল্প পন্থা তৈরী করতে হবে যাতে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে না যায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট কতিপয় প্রস্থাবনা রাখতে চাচ্ছি যা আমাদের নীতিনির্ধারণী মহলকে একটি ইঙ্গিত (ক্লু) দিতে পারে।

ইতোমধ্যে কয়েকটি বিশ্বিবদ্যালয় স্ব-উদ্যোগে ধাপে ধাপে কিছু সেমিস্টার সমাপনী পরীক্ষার আয়োজন ও সম্পন্ন করেছে। এটিকে একটি সম্ভাব্য বিকল্প বিবেচনায় নিয়ে এটি অব্যাহত রাখাই সমীচিন। ক্লাস সমূহ অনলাইনে নেয়ার যে প্রক্রিয়া চলমান আছে তা আরো সমৃদ্ধ ও জোরদার করতে হবে। সকল ব্যাচের একসঙ্গে পরীক্ষা না নিয়ে গুরুত্বানুযায়ী বিভিন্ন ব্যাচের পরীক্ষা আলাদা আলাদা সময়ে চলমান রাখা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে সকল বিষয়ে অনলইন ক্লাস কোন ইতিবাচক সমাধান নয়।

সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বা কোন বিশেষ ব্যাচের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য হল সমূহ খুলে দিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আমরা জানি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ বন্ধ রাখার অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রচলিত হল ভিত্তিক আবাসন ব্যবস্থা যেখানে করোনা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালক করা প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। কোন ব্যচের পরীক্ষা শেষ হলে তাদেরকে হল ছেড়ে দিতে হবে পরবর্তী অন্যকোন ব্যাচের ক্লাস পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য।

বিজ্ঞানের বিষয় সমূহের জন্য বিশেষত ব্যবহারিক বিষয় সমূহের জন্য যেহেতু শারিরীক উপস্থিতিতেই কার্যক্রক পরিচালনা করার প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও এ পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। শ্রেণীকক্ষের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনে একাধিক শিফটের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরকারের অর্ধ বরাদ্দ প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহকে তার প্রয়োজনের আলোকে এ বিষয়ে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা তৈরী করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের ধারণা মোতাবেক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূর্বাভাষ প্রদান করেছে যে করোনা মহামারী দীর্ঘ হতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক সময় অতিবাহিত করে ফেলেছি। যথাযথ কর্ম পরিকল্পনাই আমাদের করোনা মহামারী/অতিমারী কালীন সময়ে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে ভূমিকা রাখবে।

লেখক: চেয়ারম্যান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

১০ ম্যাচ পর জয়ের স্বাদ পেল তামিমরা

বিটিভি’র নিয়মিত নৃত্য শিল্পী হিসেবে চূড়ান্ত তালিকায় সাইফুল ইসলাম