দিনাজপুরের লিচু বাজারে আসতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে আবার দাবদাহে গাছেই ফেটে যাচ্ছে লিচু। কিছু কিছু ঝরে পড়ে যাচ্ছে। এবারের লিচুতে মিষ্টি স্বাদেও কিছুটা ঘাটতির আশঙ্কা করছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। এ নিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, লিচু চাষে দিনাজপুরে রীতিমত বিপ্লব ঘটেছে। ২০১২ সালে ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছিল। ২০১৬ সালে এসে ৪ হাজার ১৮০ হেক্টরে দাঁড়ায়। ২০২০ সালে তা দাঁড়য় ৬ হাজার হেক্টরে। এরপর এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৪৬ হেক্টরে।

সবচেয়ে বেশি লিচুর বাগান রয়েছে সদরের মাসিমপুর, পুলহাট, সিকদারহাট, গোপালগঞ্জ, বাশেরহাট এবং বিরল উপজেলার মাধববাটি, করলা, নারাবাড়ি, হুসনা, রবিপুর ও কাজিপাড়ায়। কিন্তু এবার লিচুর ফলন কম হওয়ায় এবং গাছেই লিচু ফেটের যাওয়ায় চিন্তিত বাগান মালিক ও চাষিরা। এতে লোকাসানেরও আশঙ্কা করছেন তারা।
বিরল উপজেলার বাগান মালিক মতিউর রহমান জানান, এবার প্রথম দিকে বৃষ্টি না হওয়া, শিলাবৃষ্টি, দাবদাহসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমের তুলনায় লিচুর ফলন অনেক কম হয়েছে। একই কারণে লিচুর আকার ও স্বাদেও পরিবর্তন এসেছে। স্বাভাবিক রং ধরার আগেই মাদ্রাজি ও বোম্বাই লিচু পেকে ফেটে যাচ্ছে।
৭-৮ দিন পরেই বাজারে বোম্বাই, বেদনা ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজার উঠবে বলে আশা করছেন তিনি।
সদরের মাসিমপুরে বাগান মালিক মোসাদ্দেক হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বৈশাখে অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে লিচুর দানা পরিপুষ্ট হয়ে ওঠেনি। বৈশ্বিক জলবায়ুগত প্রভাবে লিচুর উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। অপরদিকে দাবদাহের মধ্যে শিলাবৃষ্টির কারণে লিচু ফেটে যাচ্ছে। দানা পরিপুষ্ট না হওয়ায় লিচুতে টক স্বাদ বেশি থাকবে। বৈরী আবহাওয়া থেকে লিচু রক্ষায় রোগ-বালাই প্রতিরোধ এবং রং ও আকারে আকর্ষণীয় করতে বাগান মালিকরা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও কীটনাশক স্প্রে করছেন।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত বছর ফলন বেশি হয়েছিল। আমারে বাগান মালিকরা সারা বছর বাগানের যেভাবে পরিচর্যার প্রয়োজন তা করেন না। কীটনাশকের ব্যবহার এবং বৈশ্বিক জলবায়ুগত পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে লিচুতে। সে কারণে এবার ফলন কিছুটা কম হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিচু ফেটে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে লিচু বাগানে সেচ না দেয়ায় গাছের খাদ্য চাহিদা বেড়ে যায়। শেষ সময়ে বৃষ্টির কারণে গাছ অতিরিক্ত পানি শোষণ করায় লিচুর ভেতরের অংশ যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেভাবে বাইরের অংশ বৃদ্ধি পায়নি সে কারণে ও দাবদাহের কারণে লিচু ফেটে যাচ্ছে।