in ,

বদলে গেছে চাকুরী বাজারের ধরণ

মুত্তাকিন হাসান

বর্তমানে সরকারি বা বেসরকারি চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে চাচা,মামা,খালু বা আত্মীয় স্বজনের রেফারেন্স ছাড়া হয় না- কথাটি সত্য হলেও পুরোপুরি সত্য নয়। যে কোনো রেফারেন্স হয়তো আপনার চাকুরীর ইন্টারভিউ এর সুযোগ করে দিবে কিন্তু অর্জনটা আপনাকেই করতে হবে। সরকারি চাকুরীর সার্কুলার কম থাকায় এবং প্রার্থীর সংখ্যা বেশী হওয়ার সাথে সাথে কিছু স্বজনপ্রীতি থাকায় চাকুরী প্রার্থী অনেকটাই হতাশ। তবে বেসরকারি চাকুরীতে এখনও অনেক সুযোগ রয়েছে। আপনাকে শুধু বুদ্ধির সাথে একটু চোখকান খোলা রাখতে হবে। রিজিকের মালিক সৃষ্টিকর্তা, তাই বলে তার উপর ভরসা করে থাকলে চলবে না। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। চাচা,মামা,খালু বা আত্মীয় স্বজনের রেফারেন্স উসিলা মাত্র।

একজন ফ্রেসার চাকুরী প্রার্থী আমার কাছে অনেকদিন ধরে চাকুরীর জন্য অনুরোধ করে আসছেন। আমি অনেক জায়গার তার সিভিও পাঠাই এবং অনলাইন জবস পোর্টালে  তার রিলেটেড কোনো চাকুরীর সার্কুলার থাকলে সিভি পাঠানোর পরামর্শ দেই। আমার কথামতো আমারই এক পরিচিত কোম্পানিতে অর্থাৎ যে কোম্পানির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান আমার পেশাগত এক বড় ভাই। আমি কিন্তু সেই বড় ভাইকে চাকুরীর জন্য প্রভাবিত করি নি, এমনকি ফোনও দেই নাই। কিন্তু সেই চাকুরী প্রার্থী যথারীতি ইন্টার্ভিউ এর মাধ্যমে চাকুরীটি পেয়ে যায়। চাকুরী পাওয়ার পর সে আমাকে তার চাকুরীর জন্য ধন্যবাদ জানায়। সে ভেবেছে চাকুরীটির জন্য সেই কোম্পানির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধানকে খুবই প্রভাবিত করেছি। আসলে তার চাকুরীর জন্য আমার কোনো হাত নেই। তার যোগ্যতায় সে তার চাকুরীটি পেয়েছে। তার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে আমার নাম থাকায় হয়তোবা ইন্টারভিউ এর ডাক পেয়েছে।

যাহোক, নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আর মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে চাচা,মামা,খালু বা আত্মীয় স্বজনের প্রভাব ছাড়াও চাকুরী পাওয়া যায়।  

১। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরীর চিন্তা করুনঃ আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কি বা আপনার কোন বিষয়ে দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা আছে সে সম্পর্কিত পদে আবেদন করুন। অনলাইন জব পোর্টালে বা খবরের কাগজে চাকুরীর সার্কুলার দেখলেই আবেদন করে বসে থাকবেন না। চাকুরী পাওয়ার ইচ্ছার সাথে যোগ্যতার একটি সম্পর্ক আছে। বেহুদা সিভি পাঠিয়ে ইন্টার্ভিউ এর ডাক না পেয়ে হতাশায় ডুববেন না।

২।  চাকুরীর বিজ্ঞাপনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিভি তৈরি করুনঃ চাকুরী দাতার নিকট নিজেকে প্রকাশ করার অন্যতম মাধ্যম হলো সিভি। সিভির মাধ্যমে চাকুরীদাতা আপনার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা করেন। যে পদের জন্য আপনি আবেদন করেছেন তার কতটুকু যোগ্যতা আপনার আছে চাকুরীদাতার কাছে আপনার সিভিই আপনাকে প্রকাশ করে। সিভি আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের অন্যতম বাহকও বটে। তাই সিভিতে আপনাকে অনন্যভাবে উপস্থাপন করুন।

৩। যুতসই রেফারেন্স ব্যবহার করুনঃ  সিভিতে রেফারেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিভিতে সেই পরিচিতজনদের  রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করুন, যার দ্বারা চাকুরীদাতা বা মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা যাতে প্রভাবিত হয়। যে ব্যক্তি আপনাকে ভালোভাবে চিনে না বা জানে না বা যে ব্যক্তির সমাজে তেমন এক্সপজার নাই তার রেফারেন্স না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সিভিতে যাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করবেন অবশ্যই তার অনুমতি গ্রহণ করবেন।

৪। লেগে থাকুনঃ বেকারত্ব ঘোচাতে আপনার মতো অনেকেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। হতাশ না হয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যান। অনেক জায়গায় সিভি পাঠিয়েছেন কিন্তু ইন্টার্ভিউ এর ডাক পাচ্ছেন না, আবার ইন্টার্ভিউ এ ডাক পেলেও চাকুরী হচ্ছে না বলে নিজের মধ্যে হতাশার বাসা বাঁধবেন না। তাতে ইনফিওরিটিতে ভোগবেন, যা আপনার জন্য কল্যাণকর  নয়। চেষ্টা করুন বার বার। চেষ্টার বিকল্প নাই।

৫। যথোপযুক্ত নেটওয়ার্কিং তৈরি করুনঃ বর্তমান যুগ নেটওয়ার্কিং এর যুগ। আপনার নেটওয়ার্কিং এর দক্ষতা যত ভালো আপনার সুযোগও তত বেশী। অনেকে প্রার্থী চাকুরী পাচ্ছে না। আবার অনেক প্রার্থী একটার পর একটা চাকুরী বদলাচ্ছে। তাই শুধু যোগ্যতা নিয়ে বসে থাকলে হবে না, উপযুক্ত মানুষের সাথে আপনার নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে। এই দক্ষতা বিভিন্ন মানুষের সাথে আমাদের সম্পর্কের যেভাবে উন্নতি সাধন করে, ঠিক তেমনিভাবে নিজেদের যে কোনো প্রয়োজনে কাছে এসে দাঁড়ায় অনেক মানুষ। আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে নেটওয়ার্কিং করে যেমন তাদের প্রতিষ্ঠানের খবরাদি জেনে থাকবেন তেমনি আপনি আপনার যোগ্যতা সম্পর্কেও তাদের সম্যক ধারণা দিতে পারবেন। একটি সঠিক নেটওয়ার্কিং চাকুরীর ক্ষেত্রে সিভির চেয়েও বেশী সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

 ৬। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করুনঃ সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে শুধু ব্যক্তিগত জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, এটা আমার আপনার পেশাগত জীবনেরও একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সোশ্যাল বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিচিত অপরিচিত অনেক মানুষের সাথেই সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে, যা চাকুরী প্রার্থীদের জন্য সহায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ার (যেমনঃ ফেসবুক, লিঙ্ক ইন) মাধ্যমেও আপনার ব্যক্তিত্ব ও চারিত্রিক গুণাবলী প্রকাশ পায়। তাই অনেক চাকুরীদাতা চাকুরী প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব নিরূপণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা নেয়। তাই এ ক্ষেত্রে নিজেদের একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ করা দরকার। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার পরিধি অনেক প্রসারিত এবং এখান থেকে ভালো ও খারাপ উভয়ই প্রকাশ্য হতে পারে। তাই অযাচিত উপস্থাপন থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। 

 বদলে গেছে চাকুরী বাজারের ধরণ। শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নয় চাকুরী পেতে দরকার মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সঠিকমাত্রায় প্রয়োগ।

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ পেশাজীবী

সময় পেলেই চর্চা করি

বাংলাদেশ ‘ইয়াসে’র আশঙ্কা মুক্তি