দারিদ্র্যের ভিতর বসবাস করা হাজার হাজার শিশু লকডাউনে মারাত্মক মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। প্রতিটি দিন তারা নিজেদের সঙ্গে লড়াই করছে। এ বিষয়ে লন্ডনের ৭৫টি দাতব্য সংস্থার ওপর জরিপ চালিয়েছে দ্য চাইল্ডহুড ট্রাস্ট। এর মধ্যে এক চতুর্থাংশেরও বেশি বলেছে, মানসিক অস্থিরতা থেকে অনেক শিশু আত্মহত্যার মতো চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছে। আবার লকডাউনের সময় শতকরা ৪১ ভাগ শিশু বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রতি ১০টি সংগঠনের মধ্যে কমপক্ষে আটটি বলেছে, তারা যেসব শিশুকে নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যে মারাত্মকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। প্রতি ৫টি দাতব্য সংস্থার মধ্যে কমপক্ষে চারটি বলেছে, করোনার লকডাউন সত্ত্বেও, লকডাউনের সময় সামাজিক দূরত্ব এবং সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ধ্বংস করে দিচ্ছে। হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো সাক্ষ্য দিয়েছে ১১ বছর বয়সী একটি শিশু।
লকডাউনের সময় সে কেমন ছিল তা বর্ণনা করেছে। বলেছে, আমার রুমে ফিরে গিয়ে লেপ বা কম্বলের নিচে লুকিয়ে শুধু কেঁদেছি। ৯ বছর বয়সী একটি বালক বলেছে, সে স্কুলে যা শিখেছিল তার সবই ভুলে গেছে। তার ভাষায়- আমি স্কুলে যেতে চাই। কিন্তু তা কখন জানি না। আমি বাড়িতে ফিরতে চাই। কারণ, শিক্ষকরা এখন আর তেমন কিছুই শিখাচ্ছেন না। তারা কি বলেন আমি কিছুই বুঝতে পারি না। সব ভুলে গেছি আমি। এখন আমি আর স্কুলে যেতে চাই না। আমার কাছে খুব অসহায় লাগে নিজেকে।
দ্য চাইল্ডহুড ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী লরেন্স গাইনেস বলেন, বহু শিশুর মধ্যে লকডাউন ক্রনিক আকারে হতাশা, উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পর্যাপ্ত খাবার পায়নি তারা। বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয়েছে। উপযুক্ত সাপোর্ট পায়নি। ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটেছে। যখন মানুষ চিন্তা করছে এই গ্রীষ্মে তারা বিদেশ সফরে যেতে পারবেন কিনা, তখন দারিদ্র্যে বসবাস করা এসব শিশু স্কুল নিয়ে উদ্বিগ্ন। এমনকি তারা আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত করছে।
লন্ডনের ৭৫টি এমন দাতব্য সংস্থা, শিশুদের কর্মসূচি এবং সংগঠনের ওপর জরিপ চালিয়েছে দ্য চাইল্ডহুড ট্রাস্ট। এসব সংগঠন থেকে লন্ডনজুড়ে অনগ্রসর ৮৫ হাজার ৮৯০টি শিশু ও তরুণকে সাপোর্ট দেয়া হয়। জরিপে দেখা গেছে, এসব শিশুর মধ্যে সবচেয়ে অভিন্ন সমস্যা হলো মানসিক সমস্যা এবং উদ্বেগ।