স্যার বলেছিলেন, ‘‘মাঝে-মধ্যে মনে হয় আমি আমার সন্তানদের থেকেও শিক্ষার্থীদের বেশি ভালবাসি”। সম্ভবত এ কারণেই শিক্ষার্থীরা স্যারকে ভালোবেসে ‘বাবার মত ডাকতেন। আজ শিক্ষার্থীদের বাবা মত শিক্ষক বিদায় নিলেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসটি
লে: কর্নেল জিএম সারওয়ারের; যিনি ঘাটাইল ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে
কর্মরত।
বলা হয়ে থাকে, মা-বাবা সন্তান জন্ম দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখান; আর শিক্ষক দেখান জ্ঞানের আলো। শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর, অভিভাবকের মত ছাত্র-ছাত্রীর পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্বও শিক্ষকের। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষকদের নিয়ে সাম্প্রতিক সমালোচনা হয়তো তুঙ্গে, কিন্তু শিক্ষক তো শিক্ষকই। তার জন্যই তো আমার-আপনার বর্তমানের অবস্থান।
স্ট্যাটাসে ফিরে যাই। হিসেবটা সহজ। নিয়মের ঘেরাটোপে বাঁধা অধ্যক্ষ। সেই নিয়ম তো তাকে মানতেই হবে, ছেড়ে দিতে হবে ভালোবাসার প্রতিষ্ঠান। এমন বিদায়ের স্ট্যাটাস মিডিয়া ফেসবুকে এসেছে।
আসসালামুআলাইকুম,
সম্মানিত শিক্ষক, অভিভাবক, সুপ্রিয় প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বিদায়ের উপকূলে দাঁড়িয়ে সবাইকে স্মরণ করছি। আমি ২০১৮ সালের ০২ অক্টোবর অত্র প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করি। সময়টা খুব দীর্ঘ নয়। তারপরও এ প্রতিষ্ঠান আমাকে খুব সহজেই আপন করে নিয়েছিল। আমিও যতটা সম্ভব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করেছিলাম।
প্রতিষ্ঠানের সার্বিক শৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার গুণগত মানবৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ ক্লাস, ক্যারিয়ার গঠনমূলক ক্লাসসহ ক্যাডেট কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ সাধনে বিএনসিসি গঠনের পাশাপাশি স্কাউট ও গার্ল গাইড দলকে আরও গতিশীল করেছি। শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি যাতে তারা মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আদর্শ নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে পারে।
মূলপাঠের পাশাপাশি সহপাঠ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেছি যাতে তারা সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদেরকে যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
২০১৯ সালে আন্তঃক্যান্টনমেন্ট সাঃজ্ঞান প্রতিযোগিতায় অত্র প্রতিষ্ঠান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। আন্তঃ ক্যান্টনমেন্ট ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা সুনামের স্বাক্ষর রাখে। সেই সাথে সার্বিক বিবেচনায় এই প্রতিষ্ঠান টাঙ্গাইল জেলার “শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান” হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে। যা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের।
শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আধুনিক ল্যাব নির্মাণ, শিশুপার্ক নির্মাণ, ক্যান্টিন আধুনিকায়ন, সততা কর্নার নির্মাণ, শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত করাসহ শতভাগ মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাথে অভিভাবকবৃন্দের জন্য শেড নির্মাণ, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাস ক্রয় ও হোস্টেল সুবিধার প্রয়াস গ্রহণ করেছি। প্রধান ফটক একটি প্রতিষ্ঠানের অহংকার যা এই প্রতিষ্ঠানে ছিল না। মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে সেটিও নির্মিত হয়েছে।
তবে এ সবই সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানের দক্ষ, কর্মঠ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি , অভিভাবকবৃন্দ ও আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার কল্যাণে। এ জন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের রিইউনিয়ন-এর মাধ্যমে এক ছত্রতলে নিয়ে আসার একান্ত ইচ্ছে থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। সুদিন এলে সবাই একসাথে হবে সেই প্রত্যাশা থাকলো।
এই প্রতিষ্ঠানটি একটি পরিবারের মত, যার নাম জিসিপিএসসি পরিবার। এই পরিবারের একজন হতে পেরে সত্যিই আমি গর্বিত।
আমি চলে গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার সুদৃষ্টি থাকবে। যে কোন প্রয়োজনে আমি অবশ্যই প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবো।
শিক্ষার্থীদের ভালবাসা হৃদয়পটে থাকবে চিরদিন। কিন্তু প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপস্থিতে বিদায় নেয়ার দু:খ ভুলব কিভাবে?
আমার পরবর্তী চাকরিস্হল হচ্ছে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প, ঢাকা।
পরিশেষে, সবাই আমার এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া রাখবেন। আমার পক্ষ থেকেও সবার জন্য অফুরান শুভকামনা থাকলো। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আল্লাহ হাফেজ।
লে: কর্নেল জিএম সারওয়ার, পিবিজিএমএস, ইন্জিনিয়ার্স
অধ্যক্ষ
ঘাটাইল ক্যান্ট: পাবলিক স্কুল ও কলেজ
স্যার, আমরা আপনার পরবর্তী জীবনের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি। আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনাকে অনেক বেশী মিস করব স্যার।