in ,

স্ত্রীর সমর্থনে গৃহকর্মীকে যৌন নির্যতন করেন স্বামী

পঁয়ত্রিশ বছর বয়সী মহিমা তখনও বুঝতে পারেননি কী হতে যাচ্ছে। বিদেশের মাটিতে আসার পর দুই দিনের মধ্যেই ঘটে ঘটনাটি। বাসায় কেউ নেই। সকালে গাড়িতে করে অ্যারাবিয়ান পরিবারের সবাই বেড়াতে গেছেন আত্মীয়ের বাসায়। এরমধ্যেই একটা জরুরি কাজে বাসায় ফিরেন বাড়ির কর্তা। তিনি ব্যবসায়ী। বাসায় ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই মহিমাকে ডাকেন নিজের রুমে। শরীর খারাপ লাগার অজুহাতে শরীর ম্যাসাজ করতে বলেন।

অ্যারাবিয়ান পঞ্চাশ বছর বয়সী ব্যক্তি বিছানায় কাত হয়ে আছেন। সুঠাম দেহে পায়জামা ছাড়া কোনো বস্ত্র নেই। মহিমা লাজুক প্রকৃতির। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। এরমধ্যেই আবার ডাকেন। শয়ন কক্ষে গিয়েও দাঁড়িয়ে থাকেন মহিমা। এরমধ্যেই হাতটা ধরে টেনে পাশে বসিয়ে ম্যাসাজ করতে বলেন আরবিয়ান। অনিচ্ছাসত্ত্বেও মহিমা ম্যাসাজ করার চেষ্টা করেন।
তার কিছুক্ষণ পরই ঘটে অঘটন। প্রথমে হাতটা ধরেন আলতো করে। তারপর একটানে খাটে শুইয়ে দেন তাকে। মহিমা অনুনয় করেন। তিনি এরকম কিছু চান না। আধো আধো আরবি ভাষা জানেন মহিমা। যা বিদেশে যাওয়ার আগে শিখেছিলেন। ওই ভাষাতেই অ্যারাবিয়ান পুরুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেন। স্বামী ছাড়া কারও সঙ্গে এমন সম্পর্ক চান না তিনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। মহিমা আপ্রাণ বাধা দেন। বাধা দিতে দিতে ক্লান্ত। অ্যারাবিয়ানের সঙ্গে হেরে যান। সর্বস্ব লুটে নেয় মহিমার। মহিমা কান্না করেন। সৌদি আরবের রিয়াদে ঘটে ঘটনাটি।
কয়েক মাস নিরবে সহ্য করছিলেন এই অত্যাচার। বাসায় অন্য কেউ না থাকলেই মহিমাকে যৌন নির্যাতন করা হতো। দিন-দিন তা বাড়তে থাকে। এবার ওই ব্যবসায়ীর বন্ধুদের ডেকে আনা হয় বাসায়। রাতভর পার্টি হয়। সেই পার্টির আকর্ষণ হন মহিমা। কখনও কখনও ইন্দোনেশিয়ার এক তরুণী স্বেচ্ছায় অংশ নিতেন ওই পার্টিতে। নাচ, গানের আয়োজন থাকতো এতে। বিষয়টি জানতেন গৃহকর্ত্রী। তার কাছে প্রতিকার চেয়েছিলেন মহিমা। মহিমা হতভম্ব হয়ে যান। ওই নারী তার স্বামীর যৌন নির্যাতনের বিষয়টি জানার পর উল্টো মহিমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। চাকরি করতে হলে পুরুষদের এই আচরণ মেনেই চলতে হবে বলে জানিয়ে দেন তিনি।
সর্বশেষ যৌন নির্যাতনের শিকার মহিমা (ছদ্মনাম) দেশে ফিরেছেন গত বছর। দেশে মা-বাবাকে নির্যাতনের বিষয়টি জানানোর পর সৌদি আরবস্থ দূতাবাসের সহযোগিতায় দেশে ফিরেন তিনি। মহিমার মতো যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই দেশে ফিরেছেন শূন্যহাতে। করোনা শুরুর আগে গত বছরে জানুয়ারি থেকে মার্চে ১০ হাজার নারীকর্মী সৌদি আরব যান। আর গত চার বছরে অন্তত দশ হাজার নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সে দেশে নারীকর্মী পাঠানোর চুক্তির পর থেকেই নারীকর্মীরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া শুরু করে। ওই বছরেই সৌদি আরবে যায় ২১ হাজার নারী শ্রমিক। ২০১৬ সালে যায় ৬৮ হাজার। ২০১৭ সালে ৮৩ হাজার। ২০১৮ সালে ৭৩ হাজার। ২০১৯ সালে যায় ৬২ হাজার। নারী কর্মীদের যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে গত বছরের আগস্টে একটি প্রতিবেদন পাঠায় মন্ত্রণালয়। তাতে সৌদি আরব ফেরত ১১০ নারী গৃহকর্মীর তথ্য দিয়ে বলা হয়, ৩৫ শতাংশ নারী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন।
অনেকের মৃত্যু ঘটেছে। ২০১৬ সাল থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭৩ নারীর লাশ দেশে ফিরেছে। এরমধ্যে সৌদি আরবে ১৫৩ জন। জর্ডানে ৭৫ জন, লেবাননে ৬৬ জন, ওমানে ৪৫ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২৭ জন এবং কুয়েতে ২০ জন মারা গেছেন। অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে ৬০ নারীর লাশ। নিহতদের মধ্যে ৮১ জনই আত্মহত্যা করেছেন।

-মানবজমিন

ভারতে একদিনে আরও চার হাজার মৃত্যু

জনসংখ্যা বাড়লেও খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী