in

করোনা ঠেকাতে দরকার একটু সতর্কতা ও সচেতনতা

মুত্তাকিন হাসান

দেশে করোনার প্রথম ঢেউএ টিকা আসায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্থি আসলে সব যেন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বিশেষ করে বড় বড় শহরগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয়েছিলো করোনা আমাদের কাছ থেকে আস্তে আস্তে পালিয়ে যাচ্ছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি যতটুকু মেনে আসছিলো তাও বৈশাখ আসার আগেই ঝড়ে উড়ে গেলো। সংক্রমণ সাথে সাথে মৃত্যুর হারও কমেছে। সবার মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব। অনেককে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে দিব্যি দ্বিধাহীন ঘুরে বেড়াতে দেখেছি। গত বছরের লক ডাউনে আনন্দহীন থাকা মানুষগুলো আনন্দ খুঁজতে ভ্রমণ, বিয়ে, সভা-সেমিনার ইত্যাদি নিয়ে ক্রমশ ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। হাজার হাজার মানুষ কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছে। তাদের এই ভ্রমণবিলাস দেখে মনে হয়েছে যে গত এক বছরে তারা বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে উঠেছে। ফলে, সংক্রমণের হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা নিজেদের জীবন উপভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবার ধারণা গরমকালে করোনার আক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে। বিশেষজ্ঞরাও এমনটি আশা করেছিলেন। কিন্তু অপ্রতিরোধ্য করোনা সবার ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আঘাত হানতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয়  ঢেউ ক্রমশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে।    

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ বলা হয়েছিলো যে যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনগুলো ৭০ শতাংশ বেশি হারে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখলেও এতে মৃত্যুর ঝুঁকি কম। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা যে তথ্য জানতে পারছি তাতে দেখা গেছে, এই নতুন স্ট্রেইনগুলো শুধু সংক্রমণের হার দ্রুততার সাথে বৃদ্ধিই করছে না, বরং আক্রান্ত হওয়ার পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার নিমিত্তে সরকার ১৪ই এপ্রিল থেকে ২১ শে এপ্রিল পর্যন্ত সরকার কিছু বিধিনিষেধসহ আরোপ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে এ বিধি নিষেধ ভঙ্গের দায়ে বিভিন্ন প্রকার শাস্তিও আরোপ করছেন। কিন্তু কে শুনছে কার কথা। সন্ধ্যা হলেই এখনও প্রত্যেকটা বাজারের আশেপাশে দেখা যায় মানুষের আনাগোনা। স্যানিটাইজার ব্যবহারতো দূরের কথা, মাস্ক ব্যবহার করলেও থুতনিতে রেখে দিব্যি সিগারেট বা বিড়ি ফুঁকছে। দোকান-পাটের বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও দোকানের সামনের দিকটায় বন্ধ আর পিছনের দিকটায় মানুষের ভিড়। অল্প টাকার বাজার করতে হলেও বেশীরভাগ বাংগালীর একটা স্বভাব একসাথে সব ক্রয় করে না। বারবার দোকানে গিয়ে পণ্য না কিনতে পারলে যেন পেটের ভাত হজম হয় না। অনেককের মুখে শুনি, দেশে যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যায় তার সমপরিমাণও করোনায় মারা যায় না। কিন্তু করোনায় অপ্রত্যাশিত যারা মারা যাচ্ছে একমাত্র তারাই এর মর্ম ব্যথা বুঝে অন্য কেউ নয়। দৃশ্যত এর মৃত্যুর হার কম হলেও আগের চেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফেসবুক খুললেই করোনা ইনফেকশনের খবর। মৃত্যু অবধারিত হলেও করোনায় মৃত্যু এখন লটারির মতো। আক্রান্ত অনেকেই কিন্তু কার কপালে পরপার তা বিধাতাই জানে।   

মেনে নিলাম বাংলাদেশের জনগোষ্টীর বেশীরভাগ দরিদ্র এবং পেটের তাগিদে তারা রাস্তায় বের হতে বাধ্য। তবে এটাও সত্য দরিদ্র জনগোষ্টীকে বুঝালে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু যারা বুঝাবে তারাই যদি অবুঝ হয় তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ ছাড়া কোনো  দরিদ্র ব্যক্তি রাস্তায় ঘুরাফেরা বা আড্ডাবাজি  করে না। পরিবারের যারা একাধিক গাড়ির মালিক তারা নানান অজুহাতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে। আর গায়ে গতরে খাটা রিকশাওয়ালা হুদাই বিড়ম্বনার মুখে আটকে আছে। গতকাল দেখলাম বড় বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিকশা উল্টানো। পুলিশের পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে রিকশাওয়ালা। মনে হয় লক ডাউনের কঠিন প্রয়োগ রিকশার উপর। ব্যক্তিগত গাড়িতে কয়েকজন একসাথে ঘুরাঘুরি করতে পারলে রিকশা চলাচলেও শিথিল হওয়া দরকার। রাস্তায় তাদের আনন্দ উপভোগ নয় পেটের ভোগের জন্য বের হতে হয়।  

সচেতন মানুষের ভিতরে সচেতনতাবোধ জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত লক ডাউন দিয়ে করোনাকে কত টুকু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তাতে সন্দেহ থেকে যায়।  আজ করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিলাম। হাসপাতালে সামাজিক দূরত্বের যে অবস্থা তাতে মনে হয় করোনাকে যদি খোঁজার সুযোগ থাকতো তাহলে হাসপাতালেই বেশী পাওয়া যেতো। টিকার ডোজ নেয়ার আগে হাসপাতালে চেকারকে দিয়ে ম্যাসেজ চেক করে নিতে হয়। সিরিয়াল অল্প হলেও বাঙালির যেন এক মুহূর্ত দেরী সয় না। একজনের সিরিয়াল শেষ না হতেই আরেকজন কাঁধের উপরে মুখ রেখে বলে-ভাই আমার ম্যাসেজ একটু দেখবেন। দেখতে সবাই বুঝমান এবং ভদ্রলোক। সর্বক্ষেত্রে সবার মাঝে সচেতনতা বোধ থাকতে হবে। বাজার বা রেস্তোরাঁয় আরও খারাপ অবস্থা । পাড়ার অলিগলিতে ইফতার নিয়ে বসা দোকানগুলো তারই প্রমাণ। এখানে গরীব নিম্ন শ্রেণির লোকজনের আড্ডা নেই।   

দেশে এমনিতেই করোনা সেবার ব্যবস্থা অপ্রতুল। যথেষ্ট পরিমাণের আইসিইউ ব্যবস্থা নাই। ওষুধ বা চিকিৎসা নয় সবার একটু সতর্কতা আর সচেতনতাই করোনা ঠেকানোর একমাত্র পথ। কারণ ওষুধ বা চিকিৎসাই যদি একমাত্র উপায় হতো তাহলে ধনী ব্যক্তিরা এ কাতারের বাইরে থেকে যেত। এরপরও যদি করোনা  প্রতিরোধক হিসেবে মাস্কের সঠিক ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলে তাহলে করোনাকে ঠেকানো দুষ্কর হবে।   

লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ পেশাজীবী

মাওলানা মামুনুল হক গ্রেফতার

টাঙ্গাইলে অনুমোদনহীন ঔষুধ কোম্পানীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা