in ,

নিজের অনুপ্রেরণা নিজেই

মুত্তাকিন হাসান

ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনের প্রায় প্রতিটি স্তরে মটিভেশন শব্দটি আমরা অনেক শুনেছি। বিশেষ করে কর্মজীবনে এর গবেষণা প্রচুর এবং যে কোনো সাফল্যর পেছনে কারণ হিসেবে মটিভেটেড এমপ্লয়ী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রায় প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই মটিভেশনাল কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কেনা হয় কতশত বই। এ কারণেই দেশে নামে বেনামে প্রচুর মটিভেশনাল স্পীকারের জন্ম হয়েছে। অথচ মানব-চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-শেষ পর্যন্ত নিজের মটিভেশন নিজের কাছেই। ব্যক্তিগত জীবনে আপনি যাতে অনুপ্রাণিত হোন তাই আপনার কর্মজীবনকে প্রভাবিত করে।মটিভেশনাল কর্মশালার মাধ্যমে আপনি হয়তো অনেক কিছু শিখতে পারবেন এবং শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য তা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে-মনে হবে আপনি এখনি অনেক কিছু করে ফেলবেন। কিন্তু দিন শেষে আপনি যা তাই। তাই নিজেই যদি নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে না পারেন তাহলে মটিভেশনাল কর্মশালা বেটে ওষুধ বানিয়ে খাওয়ালেও কোনো লাভ হবে না। সেজন্যই অনেক নিয়োগকর্তা চাকুরী বিজ্ঞাপনের কোথাও না কোথাও লিখে থাকে- Self Motivated. ধার করা পদবী যেমন কোনো পরিবারের পরিচিতিতে তেমন কাজে আসে না তেমনি ধার করা মটিভেশনও কারো ব্যক্তিউন্নয়নে তেমন কাজে আসে না।

সহজ ভাবে সেলফ মটিভেশন বলতে বলা যায়, অন্য কোনো ব্যাক্তির প্রভাব বা অনুপ্রেরণা ছাড়া নিজের যে কাজ টি করা দরকার বা কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করা, নিজেকে নিজেই উদ্যোগী করা। যে কাজটি করতে চান, যে লক্ষ্যে পৌঁছতে চান সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করা। ব্যক্তিজীবনে বা কর্মক্ষেত্রে নিজে উদ্দমী হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কোনো কাজে সফল হন দেখবেন নিজের ভিতরে ভালো একটা অনুভূতির তৈরি হবে, কোনো কাজ কঠিন মনে হবে না। আর ব্যর্থ হলে যদি বলেন আমি পারবো না, আমাকে দিয়ে হবে না তাহলে বুঝতে হবে আপনি সেলফ মটিভেটেড নন। অর্থাৎ আপনার নিজের উপর আপনার নিয়ন্ত্রণ নাই। এই মনস্তাত্ত্বিক বেপারটা আমাদের কাজে অনেক বড়ো প্রভাব রাখে। এইসব কারণে সেলফ মোটিভেটেড হওয়া জরুরী। একটি ছোট্ট বাচ্চা যদি তার বাবার সাথে দোকানে খেলনা কিনতে গিয়ে তার নিজের পছন্দ মতো খেলনা কিনেন তাহলে বাবার দামি খেলনার চেয়ে কম দাম হলেও তাতে সে বেশী খুশী হবে। খেলনা পছন্দ করাটা তার কাছে কঠিন হলেও সে কিন্তু ঠিকই পছন্দ করতে পারবে এবং তার নিজের উপর বিশ্বাস জন্মাবে। সেলফ মটিভেশন একটা ব্যাক গ্রাউন্ড প্রসেস।নিজের প্রতি বিশ্বাস আর নিয়ন্ত্রণ থাকলে যখন প্রয়োজন তখনই কাজে আসবে। বিখ্যাত আমেরিকান লেখক এবং মোটিভেশন স্পিকার Stephen R. Covey বলেন “মোটিভেশন নিজের ভেতরের আগুন, যদি অন্য কেউ তা জ্বালানোর চেষ্টা করে তবে তা খুব কমই জ্বলবে”। তাই নিজের ভিতরের আগুন নিজেকেই জ্বালাতে হবে। সেলফ মটিভেশন আমাদের কাজের শক্তি যোগায়। কিছু কৌশল আছে যেগুলো অবলম্বন করলে সহজে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা যায়। আসুন জেনে নিই সে কৌশলগুলোঃ

১। নিজেকে গুরুত্ব দিন-জীবনের পথ সমান নয়।তাই অসমান পথ দেখে ভেঙে পড়লে চলবে না। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। সব কিছুর সমতা রেখেই আমাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।
আপনি যদি অন্যকে গুরুত্ব দিতে থাকেন দেখবেন একটা সময় নিজেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়বেন। অন্যকে গুরুত্ব দেয়াও মানুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য। তবে এতটা গুরুত্ব কখনও দেওয়া যাবে না যাতে নিজেকে গুরুত্বহীন বলে বিবেচিত হয়। তাই নিজের সাথে থাকুন।
নিজের মন কে নিজের আয়ত্তে রাখুন, মন কে যেন অন্য কোনো কিসে বা অন্য কেউ চালাতে না পারে। খারাপ চিন্তা গুলোকে দূরে সরিয়ে ভালো চিন্তা করুন। নিজের সাথে কথা বলুন। আপনার ভালো চিন্তাভাবনা গুলোকে নিজের ক্ষমতা দিয়ে বাস্তবে রূপ দিন।

২।জীবনকে উপভোগ করুন-জীবনে যেরকম পরিস্থিতিই আসুক না কেনো সেই অবস্থাতেই জীবনকে উপভোগ করা শিখুন।নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা করুন। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়মিত শুকরিয়া আদায় করুন। চেষ্টা করুন অন্য কাউকে সাহায্য করার মাধেমে তার মুখে হাসি ফোটানোর। প্রতিটি দিনশেষে প্রার্থনা করুন পরের দিনটি যেনো আরো ভাল কিছু বয়ে নিয়ে আসে।

৩।সফল ব্যক্তিদের জীবনী পড়ুন-নিজে অনুপ্রাণিত হতে সফল ব্যক্তিদের দিকে তাকান, তাঁদের সম্পর্কে জানুন। মনীষীদের অনুপ্রেরণা মূলক উক্তি গুলো পড়ুন। দরকার হলে একটি কাগজে লিখে আপনার টেবিল এ রাখুন যেন মাঝে মধ্যে তা চোখে পরে। ভালো ভালো গান শুনুন, গান মন ও মস্তিস্ক দুটোকেই শান্ত রাখে।

৪। ইতিবাচকদের সংস্পর্শে থাকুন-বিখ্যাত লেখক জিম রন লিখেছেন সাধারণত আমরা গড়ে ৫জন মানুষের সাথে বেশির ভাগ সময় কাটাই। তাই পরিবর্তনে বিশ্বাসী হতে ইতিবাচক মনের মানুষদের সাথে মিশুন। নেতিবাচক মানুষরা সমাধানের মধ্যও সমস্যা খুজে পায়। কাজেই, সর্বদা ইতিবাচক প্রগতিশীল মনের ব্যক্তিদের সংস্পর্শে থাকুন এবং তাদের সাথে সময় কাটান।

৫। সমালোচনা থেকে ভয় নয়- সমালোচনা না থাকলে কেউ আলোচনায় আসতে পারে না। কোনো মানুষই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। যেখানে সমালোচনার ভয় সেখানে উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির অপচয়।জীবন চলার পথে সমালচনা আসবেই আর এটাকে মেনে নিয়েই এগিয়ে চলতে হবে। লোকে কি বলবে এই ভাবনা নিয়ে বসে থাকলে ভাবনার পথ শেষ হবে না। তাই সমালোচনাকে ইতিবাচক ভেবে চিন্তাকে প্রসারিত করতে হবে।

৬।নিজের জন্য একান্ত সময় রাখুন- কাজের বাইরেও নিজের জন্য সময় রাখুন। সেলফ মোটিভেটেড বা নিজে উদ্দমী হওয়ার মানে এই নয় যে শুধু কাজ আর কাজ, কাজের বাইরেও একটা দুনিয়া আছে যার জন্য আপনি কাজ করছেন। নিজের জন্য সময় বের করুন, একটু রেস্ট নিন, পরিবারকে সময় দিন, পার্কে ঘুরতে যান, যা কিছু ভালো আপনি পেয়েছেন তার জন্য আপনার পালনকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। জীবনকে ভালোবাসতে শিখুন, এই ভালোবাসাই আপনাকে সেলফ মোটিভেটেড হতে সাহায্য করবে।

৭।অবসরে নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করুন-আপনি হয়তো কবিতা আবৃতি বা লেখালেখি ইত্যাদি করতে পছন্দ করেন। অবসর সময়ে নিজের এ ধরণের ভালো লাগার কাজগুলো করুন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যে, শখের বশে অনেকে এমন কাজ করেছে যা তিনি কখনো ভাবেন নি।

৮।প্রতিটি কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজুন-সমস্যা সবারই থাকে।কিন্তু তার মানে এই নয় যে সমস্যার কথা ভেবে হতাশাকে আশ্রয় দিতে হবে। হতাশা বা দুশ্চিন্তা কখনোই সমস্যার সমাধানের উপকরণ নয়।


লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ পেশাজীবী

সিরিজে এগিয়ে গেল টাইগাররা

বাইডেন-কামালার শপথ গ্রহণ