in ,

বাংলাদেশের কৃষি: জিডিপিতে হিস্যা কমলেও অর্থনীতিতে বাড়ছে গুরুত্ব ও অবদান

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশর প্রধান অর্থকরী খাত ছিল কৃষি। স্বাধীনতা পরবর্তী দুই যুগ পর্যন্ত কৃষির সাথে প্রতিযোগিতা করার মতো অন্য কোনো দৃঢ় অর্থনীতি এ দেশে ছিল না। দিনদিন দেশের উন্নতির সাথে সাথে শিল্প, সেবা, ব্যবসা প্রভৃতি খাতের প্রসার ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর হিসেব অনুযায়ী জিডিপিতে কৃষির তুলনায় সেবা ও শিল্প খাতের অবদান বেড়েছে। ফলে তুলনামূলকভাবে জিডিপিতে কৃষির হিস্যা কমেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, কৃষি পিছিয়ে পড়েছে। বরং শিল্প ও সেবা খাতে এগিয়ে যাওয়ার ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে মূলত দেশের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস সেই কৃষি খাত।

এ শতাব্দির মোট জিডিপির ধারাবাহিকতা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯৭২-১৯৭৩ সালে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৪৮.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার ৯০ ভাগ তখন আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে। ২০০০-২০০১ সালে মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ২০.৮ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.৩৫ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে তিনটি বৃহত্‍ খাতের মধ্যে সেবা ও শিল্প খাতের পর কৃষির অবদান এখন তৃতীয়।

বিদায়ী অর্থবছরে মোট জিডিপির পরিমাণ ছিল ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কৃষি থেকে এসেছিল ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা, যেখানে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো কৃষিতে অবদান বেড়েছে, কমেছে কেবল হিস্যা।

বাংলাদেশে এখন কৃষিপণ্য ধান, গম, ভুট্টা, চা, পাট, তুলা, আখ, আলু, ডাল, তৈলবীজ, সবজি, ফল, মশলা, ফুল ও রেশমগুটি। এর বাইরে মাছ চাষ, গাবাদি পশু ও হাস-মুরগি পালন অন্যতম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উক্ত কৃষিপণ্যের উত্‍পাদন ক্রমাগত বাড়ছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি, পরিবেশ সহিষ্ণু উন্নত বীজ, সার এবং যন্ত্রের ব্যবহার উত্‍পাদন বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ।

একসময় বাংলাদেশে বেশির ভাগ ধান ছিল প্রকৃতি নির্ভর, যেমন আমন ও আউশ। ১৯৭০-৭১ সালে দেশের মাত্র ২০ শতাংশ ফসল আসত বোরো থেকে। আর এখন দেশের ৫৫ শতাংশ চাল আসে বোরো থেকে।

বিবিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, ৪৪ বছরে (২০১৫ সাল পর্যন্ত) দেশের ধান চাষের জমি ১৮ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একই সময়ে চালের উত্‍পাদন বেড়েছে ৩.১৬ গুণ৷

 বিদায়ী অর্থবছরে (২০১৯-২০) চালের উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টন, যা প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ফলে বিশ্বে চাল উৎপাদনে ইন্দোনেশিয়াকে টপকে চীন ও ভারতের পরই তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ এখন চাল রপ্তানিকারক দেশ। বছরে দুই লাখ টন চাল রপ্তানি করা হয়। শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশের চাল নিচ্ছে। আফ্রিকায় চাল রপ্তানির জন্য বাজার খোঁজা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, সংস্থার বিজ্ঞানীরা ১৯৭১ সাল থেকে এ পর্যন্ত (২০১৫) ৭৪টি উচ্চফলনশীল (উফশী) ও চারটি হাইব্রিড ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে ১৪টি জাত লবণাক্ততা, বন্যা ও খরাসহিষ্ণু। এছাড়া বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)-এর বিজ্ঞানীরা ১৬টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যার চারটি লবণাক্ততা ও খরাসহিষ্ণু জাত। পাশাপাশি কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজন উৎপাদনশীলতায় আরও বেশি গতি সৃষ্টিতে সহায়তা করছে।

স্বাধীনতার পর থেকে দেশে আলু চাষের জমি সাড়ে ৫ গুণ বেড়েছে। ফলন বেড়েছে ১০.৯ গুণ। এই সময়ে গমের উত্‍পাদন বেড়েছে প্রায় ১৩ গুণ। ভুট্টার ফলন বৃদ্ধির হার রীতিমতো বিস্ময়কর। এ পর্যন্ত দেশে ভুট্টার উত্‍পাদন বেড়েছে প্রায় ৮০০ গুণ৷ আর এই ফসলের জমির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, সবজি উত্‍পাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। দেশে সবজির উত্‍পাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। এখন প্রায় সারা বছরই ২০ থেকে ২৫ জাতের সবজি উত্‍পাদন হয়। গত এক দশকে বাংলাদেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ ৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।

এফএও বলছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চিন। এফএও-এর হিসাবে সমুদ্রে মাছ আহরণের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম।

উপরোক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির হিস্যা তুলনামূলকভাবে কমলেও, এদেশের মানুষের চাহিদার সাথে সাথে বাড়ছে এর গুরুত্ব ও অবদান।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Written by Atiq Nayan

বাজারে আসছে করোনার টিকা, প্রতি ডোজ ১১২৫ টাকা

আবারও ছুটি বাড়লো