in

ভেজাল মদপানে বাড়ছে মৃত্যু

ভেজাল মদ পানে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়ছে মৃত্যুর ঘটনা। গত কয়েকদিনে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে দুটি ঘটনায় ৫ জন ও বগুড়ায় পৃথক স্থানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই বিষাক্ত মিথানল দিয়ে তৈরি ভেজাল মদ পান করে অসুস্থ হয়ে অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এতে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে। ভেজাল মদ খেয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর আসার পর তৎপর হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার রাতে রাজধানীর ভাটারায় এমন একটি ভেজাল মদের কারখানার সন্ধান পেয়েছে। সেখান থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়।

মদ পানে যাদের মৃত্যু হয়েছে এবং যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন, তাদের অধিকাংশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘মিথানল বিষক্রিয়া’র উল্লেখ রয়েছে। মিথানল বা মিথাইল অ্যালকোহল হচ্ছে স্পিরিটের সবচেয়ে অশোধিত পর্যায়। সাধারণত এটি হালকা, বর্ণহীন এবং উগ্র গন্ধযুক্ত হয়। কাঠের বা প্লাস্টিকের কাজ, বার্নিশ বা রং করা অথবা ছাপাখানার কাজ- এরকম বহু ক্ষেত্রে মিথানল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রায়ই মদের নামে স্পিরিট খেয়ে মৃত্যু হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ভেজাল মদ খেয়ে মারা যাওয়া বা অসুস্থ হওয়ার ঘটনাগুলোয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, ভেজাল মদ তৈরির ক্ষেত্রে মূল উপাদান হিসেবে মিথানল ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলাদেশে সব জায়গাতেই মদ সেবন এবং সব দোকানে মদ বিক্রির বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। সাধারণত সরকার অনুমোদিত কিছু ওয়্যার হাউজ, লাইসেন্সকৃত পানশালা এবং বিভিন্ন হোটেল থেকে মদ কিনে থাকেন মানুষ। শুধু মদ সেবন করার লাইসেন্সধারী ব্যক্তিরাই এইসব জায়গা থেকে মদ কিনতে পারবেন।
ঢাকার অন্তত চারটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক সপ্তাহে মদ পানের পর বিষক্রিয়ার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। চিকিৎসক ও রসায়নবিদদের মতে, মিথানল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে মদ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যে এ্যালকোহলের পরিমাণ মানুষের গ্রহণের জন্য নিরাপদ মাত্রায় নামিয়ে আনেন। তবে অসাধু ও অবৈধ ব্যবসায়ীরা অনেক সময় তৈরি করা মদের সাথে শিল্প কারখানার কাজে ব্যবহৃত মিথানল যোগ করেন।
২০১৭ সালে ‘অ্যনালস অব অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে আসে যে, প্রায় ৪ থেকে ১২ গ্রামের মত বিশুদ্ধ মিথানল সরাসরি সেবন করলে একজন মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। তবে ব্যক্তিভেদে এর চেয়ে কম পরিমাণ বিশুদ্ধ মিথানল গ্রহণেও মানুষের অন্ধ হয়ে যাওয়ার বা মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, মিথানল শরীরে প্রবেশ করলে ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, স্নায়ুতন্ত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে – এই দুই কারণেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। মিথানল গ্রহণ করার পর যত সময় যায়, ততই তা শরীরের সাথে মিশে যেতে থাকে এবং শরীরের তত বেশি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। শরীরে মিথানল প্রবেশ করলে বিষক্রিয়ার কারণে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কিডনি সেই অতিরিক্ত অ্যাসিড বের করে দিতে সক্ষম হয় না। এর ফলে কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র, যকৃতসহ অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। চিকিৎসকরা বলেন, মিথানলের বিষক্রিয়ার সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়ে চোখের স্নায়ুর ওপর। বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পর বেঁচে যাওয়া অনেকেই অন্ধত্ব বরণ করেন। সাধারণত মানুষের শরীরে মিথানল প্রবেশ করার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে উপসর্গ প্রকাশ হতে।

আল জাজিরার সংবাদ সরকারের প্রত্যাখ্যান

মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি