in

হাজী দানেশ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হলেন প্রফেসর ড. শাহাদৎ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বহু প্রতিভার অধিকারী প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান।

প্রফেসর ড. মো. শাহাদৎ হোসেন খান, ডাক নাম লিখন নামেই সমধিক পরিচিত, ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম মো. তোরাব আলী, মায়ের নাম মোছা. জমিলা খাতুন। বাবার চাকরির সুবাদে সিলেটে অবস্থান করায় সেখান হতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে এক বছর লেখাপড়া করার পরই বাবার বদলীর কারনে চলে আসেন টাঙ্গাইলে এবং ভর্তি হন বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে। কৃতিত্বের সাথে ৬ টি বিষয়ে লেটারমার্কস সহ এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। টাঙ্গাইলের সরকারী এমএম আলী কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নকালীন সময়েই ১৯৯৬ সালে তৎকালীন হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ।

২০০৩ সালে জাপান সরকারের মনবুশো বৃত্তি নিয়ে জাপানের ইয়ামাগাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন। কৃতিত্বের সাথে এমএস ও পিএইচডি সম্পন্ন করে ২০০৯ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। ২০১১ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। ২০১২ সালে তিনি ব্রিটিশ কাউন্সিল ফেলো নির্বাচিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বদান ও পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে কমনওয়েলথ ফেলোশীপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেন। বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতন ও সুযোগসুবিধার চাকুরীর প্রলোভন তিনি বারে বারেই উপেক্ষা করে দেশ প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

প্রফেসর খান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করেছেন। হল সুপার (প্রভোষ্ট), পরিচালক ছাত্র পরামর্শ (ছাত্র উপদেষ্টা), পরিচালক (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ), পরিচালক (ক্রীড়া ও শারিরীক শিক্ষা), পরিচালক (হিসাব) সহ বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা রাখছেন। সম্প্রতি তিনি মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে তিনি আন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য-সচিব ও জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, ২০০৫ সালে কোরিয়াতে  অনুষ্ঠিত “বিশ্ববিদ্যালয় অলিম্পিকে” বাংলাদেশ দলের পরিচালনা কমিটির বিকল্প প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশে ও বিদেশে সুনাম অর্জন করেন।

একাডেমিক বিষয়ের পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কো-কারিকুলার কার্যক্রমের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন। ছাত্র জীবন হতেই রোভার স্কাউটের সাথে জড়িত থাকার কারণে তৎকালীন কৃষি কলেজে লেকচারার হিসেবে যোগদানের পর পরই রোভার স্কাউট চালু করেন। ২০০১-২০০৩ সালে দিনাজপুর জেলা রোভার স্কাউটের সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে সমগ্র জেলায় রোভারিং কার্যক্রমের বিস্তার ঘটান। ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান সামুদ্রিক জাম্বুরী-তে বাংলাদেশ দলের পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। এর পাশাপাশি তিনি হাবিপ্রবি রোটার‍্যক্ট ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা, রেড ক্রিসেন্টেরও যুব উপদেষ্টা। একস্ট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমের সাথেও প্রফেসর শাহাদৎ হোসেন খান ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন। তিনি হাবিপ্রবি আর্ট ও লিচারেচার এসোসিয়েশন, ষ্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ও ইয়েলো ল্যাম্পের বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত সক্রিয় সেঁজুতি নাট্য চক্রেরও প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় ডিবেটিং ক্লাবের ২৫ বছর যাবত উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোকারিকুলার ও একস্ট্রা কারিকুলার কার্যক্রম এবং ক্রীড়া, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই সফল সংগঠক ও নেতৃত্ব প্রদানের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

প্রফেসর শাহাদৎ এর রয়েছে সাংগঠনিক নেতৃত্বদানের সহজাত প্রতিভা। ৯০ দশকে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকা অবস্থায় সৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্রদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও নিজ এলাকায় আন্দোলন সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সদস্য (২০১১-১২) ও পরবর্তীতে আহবায়ক কমিটির সদস্য-সচিব মনোনীত হন (২০১২-১৩)। প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের প্রাক্তন উপদেষ্টা ও বর্তমান সহসভাপতি। ২০১১ সাল হতে অদ্যাবধি দিনাজপুর জেলা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতির আসন অলংকৃত করছেন। ২০০৮ সালে জাপানের সুরুওকা শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক উৎসব আয়োজনে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনেন। ২০১৬ সালে ডেনমার্কে অবস্থানকালীন সময়ে ডেনমার্ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা (২০১৬-১৮) মনোনীত হন।

প্রফেসর শাহাদৎ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ও বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞানী সমিতির আজীবন সদস্য। তিনি জাপান, চীন, কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, ভারত সহ বিশ্বের ১৩ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন ও উক্ত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাচ্ছেন। প্রফেসর খান ২৭ টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন যার ২২টিই উচ্চমান সম্পন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। স্ত্রী ড. আফরীন আক্তার একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তিন সন্তানের জনক প্রফেসর শাহাদৎ-এর বড় কন্যা জাপানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়নরত, মেঝো ছেলে ও ছোট কন্যা দিনাজপুরে লেখাপড়া করছে। অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেনের সবচে’ বড় পরিচয়, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ ও জনপ্রিয় শিক্ষক। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে, একজন সফল শিক্ষাপ্রশাসক হিসেবে, সর্বোপরি একজন সৎ, ধার্মিক ও সাহসী মানুষ হিসেবে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

‘ক্রিকেটের ভগবান থেকে আম্বানির কুকুর’- সচিন সম্পর্কে নেটিজেনদের ক্রোধ

২৩ লাখ মৃত্যু