ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যেখানে মূল তত্ত্বাবধান করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ার নজরদারি করছেন তিনি। দলের অভ্যন্তরে এখন মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্যায় চলছে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিশ্লেষণ করে তারেক রহমান ফোনের মাধ্যমে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দিচ্ছেন। এই ফোনকলেই নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে কারা নির্বাচনী প্রচারণায় পূর্ণোদ্যমে নামবেন।
দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘এবার সিনিয়রিটি বা কেন্দ্রীয় সম্পর্কের চেয়ে মাঠের বাস্তবতা ও জনগণের পছন্দই প্রধান ভূমিকা পালন করছে। তারেক রহমানের কাছে প্রতিটি আসনের বিস্তারিত রিপোর্ট রয়েছে। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া প্রার্থীরাই ফোনকল পাচ্ছেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, অক্টোবর মাসের মধ্যেই দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফোন পেয়ে প্রচারণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তরুণ, পেশাজীবী ও পরিচিত মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে:
ঢাকা-৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবিন
ঢাকা-৬: ইশরাক হোসেন
ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস
ঢাকা-১০: ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম
ঢাকা-১২: হাবিব উন খান নবী সোহেল
ঢাকা-১৩: ববি হাজ্জাজ
ঢাকা-১৪: সানজিদা ইসলাম তুলি
ঢাকা-১৫: মামুন হাসান
ঢাকা-১৬: আমিনুল হক
ঢাকা-১৭ আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি’র সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর বাইরেও ধীরে ধীরে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে। অন্তত ৬০টি আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতভেদ বা অনিশ্চয়তা নেই। এসব আসনে শীর্ষস্থানীয় ও পরীক্ষিত নেতাদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।
দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন: ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মো. শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩), মিয়া নুরুউদ্দিন অপু (শরীয়তপুর-৩), আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩), অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), রশিদুজ্জামান মিল্লাত (জামালপুর-১), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), মাহমুদ হাসান খান (চুয়াডাঙ্গা-২), ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৫), আমিরুল ইসলাম খান আলীম (সিরাজগঞ্জ-৫), লুৎফুজ্জামান বাবর (নেত্রকোনা-৪), ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যারা এলাকায় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য, তারা এবার মনোনয়ন পাবেন। একই আসনে অনেক প্রার্থী থাকতে পারে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই খোঁজ-খবর নিয়েছেন।’
দলের নেতারা মনে করছেন, তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলের ভিতরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে, একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের মঞ্চে তুলে ধরছে।

