শাহবাগ থানার সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আদালতের কাছে তার জামিনের জন্য আবেদন করেননি।
শুক্রবার সকালে ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হকের আদালতে, এই মামলায় লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান।
মামলার শুনানিতে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী তার জামিনের প্রার্থনার জন্য ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি বলে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম সাইফ জানিয়েছেন।
সাইফুল ইসলাম সাইফ বলেন, “লতিফ সিদ্দিকীর জামিনের প্রার্থনা জন্য করতে যখন তার কাছে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে যাই, আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে। তখন তিনি বলেন, যে আদালতের জামিন দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তার কাছে কেন জামিন চাইব? আমি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করব না, জামিন চাইব না।
“যতবার স্বাক্ষর করতে যাই, ততবারই তিনি এ কথা বলেন, এ কারণে তিনি জামিনের প্রার্থনা করেননি।”
আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখীসহ অন্যরা জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
অপর আসামিরা হলেন- মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো.আব্দুল্লাহ আল আমিন (৭৩), শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন (৫৫), মঞ্জুরুল আলম (৪৯), কাজী এ টি এম আনিসুর রহমান বুলবুল (৭২), গোলাম মোস্তফা (৮১), মো. মহিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৬৪), মো. জাকির হোসেন (৭৪), মো. তৌছিফুল বারী খান (৭২), মো. আমির হোসেন সুমন (৩৭), মো. আল আমিন (৪০), মো. নাজমুল আহসান (৩৫), সৈয়দ শাহেদ হাসান (৩৬), মো. শফিকুল ইসলাম দেলোয়ার (৬৪), দেওয়ান মোহম্মদ আলী (৫০), মো. আব্দুল্লাহীল কাইয়ুম (৬১)।
এদিন সকালে আসামিদের সিএমএম আদালতে আনার পর হাজতখানায় রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের এজলাসে তোলা হয়। এসময় তাদের হাতে হাতকড়া, মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। কাঠগড়ায় তোলার পরও আসামিদের পরনে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেখা গেছে।
শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “ভয়াবহ অবস্থা। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খুলি।”
তখন পুলিশ সদস্যরা তাদের জ্যাকেট খুলে দেন।
কাঠগড়ায় সবার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন লতিফ সিদ্দিকী। এসময় তাকে হাস্যজ্জ্বোল দেখা যায়। পানি পান করেন। মাঝে মধ্যে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ ফারজানা হক এজলাসে ওঠেন।
এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে আইনজীবীরা আসামিদের স্বাক্ষর নিতে চান। লতিফ সিদ্দিকী বাদে অপর অধিকাংশ আসামিই ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন। লতিফ সিদ্দিকীর কাছে সাইফুল ইসলাম সাইফ স্বাক্ষর নিতে যাওয়ার পর তিনি ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেননি।
কারাগারে নেওয়ার পথে সাংবাদিকরা লতিফ সিদ্দিকীর কাছে তার কিছু বলার আছে কী না জানতে চাইলে তিনি মাথা নাড়িয়ে ‘না’ করে দেন।
পরে তাকেসহ অন্যদের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি বন্ধের লক্ষ্যে গত ৫ অগাস্ট ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সংগঠনের উদ্দেশ্য জাতির অর্জনকে মুছে ফেলার সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গত ২৮ অগাস্ট সকাল ১০টায় একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
“সেগুনবাগিচায় বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর মধ্যেই এক দল ব্যক্তি হট্টগোল করে স্লোগান দিয়ে সভাস্থলে ঢুকে পড়েন। একপর্যায়ে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দরজা বন্ধ করে দেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করেন। হট্টগোলকারীরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়াদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। একপর্যায়ে অতিথিদের অনেককেই বের করে দেওয়া হলেও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা। পরে পুলিশ এসে ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন এসআই আমিরুল ইসলাম। পরবর্তীতে এ মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।”