কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে বিচার শেষে মানুষকে যেতে হবে তাদের চিরস্থায়ী গন্তব্যে। এই যাত্রার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভীতিকর অংশ হলো পুলসিরাত, এমন এক সেতু যা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। সিরাত শব্দের আভিধানিক অর্থ “স্পষ্ট রাস্তা”, আর ইসলামের শরীয়তের পরিভাষায় এটি হলো সেই রাস্তা বা সেতু যার ওপর দিয়ে প্রতিটি মানুষকে পার হতে হবে, এবং যা জান্নাতে প্রবেশের একমাত্র পথ।
কোরআনে এই বাস্তবতার স্বপক্ষে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার (জাহান্নামের) উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, এটা আপনার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। পরে আমি মুক্তাকীদেরকে উদ্ধার করব এবং জালিমদের সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দেব। (সুরা মারইয়াম, আয়াত ৭১–৭২)
হাদিসে পুলসিরাতের বিস্তার এবং এর ভয়াবহতা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পুলটি জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে। এটা পদস্খলনকারী, পিচ্ছিল, লোহার হুক ও বর্শি এবং নাজদের সাদান গাছের কাঁটার মতো বাঁকা ও চওড়া কাটার সঙ্গে তৈরি হবে।
হাদিসে বলা হয়েছে, মুমিনগণ বিভিন্ন গতিতে এই পুল অতিক্রম করবে। কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুতের গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার মতো, কেউবা অন্যান্য যানবাহনের মতো অতিক্রম করবে। যেকেউ পার হবে, কেউ দেহের কিছু অংশ জাহান্নামের আগুনে জ্বলে গেলেও শেষ পর্যন্ত পার হয়ে যাবে। আবার কিছু ব্যক্তি পুলের উপর থেকে পড়ে গিয়ে পরে শাফায়াতের মাধ্যমে উদ্ধার হবেন। তবে মুনাফিকরা এই পুল পার হতে সক্ষম হবে না, বরং তারা চিরকালের জন্য জাহান্নামে পড়বে। (বুখারি, মুসলিম)
পুলসিরাতের এই বর্ণনা কেবল ভয়ঙ্কর নয়, বরং তা মানুষের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়বদ্ধতার প্রতি সচেতনতার আহ্বান। প্রত্যেক মুমিনের জন্য এটি এক অনন্য প্রেরণা, তাদের আমল, নিয়ত এবং ঈমান অনুযায়ী তারা এই ভীতিকর পথ অতিক্রম করবে এবং তাদের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারিত হবে।
এভাবে পুলসিরাত কিয়ামতের দিন বিশ্বাসীদের জন্য ভয়, সতর্কতা এবং প্রেরণার এক চিত্র, যা তাদের জীবনের প্রতিটি আমলকে গুরুত্ব দেওয়ার দিকে প্রণোদিত করে।