ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে ‘বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন’পরীক্ষা আয়োজন করেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তার চাকরি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। অথচ ব্যাংকে একই পদে প্রায় ৮ হাজার কর্মকর্তা থাকলেও শুধু পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সার্কুলার জারি করা হয়েছে ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের ।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার এ অভিযোগ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি ‘বিশেষ সক্ষমতা যাচাই’ পরীক্ষার আয়োজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করার পাঁয়তারা শুরু করেছে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অবৈধ পরীক্ষার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিটে পরীক্ষা প্রক্রিয়া স্থগিত করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ উপেক্ষা করে ২২ সেপ্টেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট’ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে এবং বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের নোটিশ জারি করেছে। নতুন তারিখ অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ব্যাংকের নিয়মিত ও স্থায়ী কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন শাখা ও ইউনিটে নিষ্ঠা, সততা, একাগ্রতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক সম্প্রতি প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কর্মকর্তা— সিনিয়র অফিসার, অফিসার, অফিসার (ক্যাশ), জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ), অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার (ক্যাশ) এর জন্য ‘স্পেশাল কম্পিটেন্সি অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট’ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, এটি সংবিধান, শ্রম আইন ২০০৬, সার্ভিস রুলস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত ব্যাংকিং আইন ও বিধির পরিপন্থী।
‘ব্যাংকে ওই পদগুলোতে প্রায় ৮ হাজার কর্মকর্তা থাকলেও কেবল ২০১৭ সালের পরে নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য সার্কুলার জারি করা হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সার্কুলারে বলা হয়েছে— এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক এবং এটি চাকরিতে বহাল থাকা ও ক্যারিয়ার উন্নতির পূর্বশর্ত। অনুপস্থিতদের আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। এটি মূলত কুমন্তব্যপূর্ণ এবং বৈষম্যমূলক; যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৭, ২৯, ৩১ এ বর্ণিত সমতা, সমঅধিকার ও সমান কর্মসংস্থানের নীতির লঙ্ঘন করছে। আমরা দ্রুত এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়মিত প্রমোশন পরীক্ষা আয়োজনের আবেদন জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান আলী চৌধুরী, রিট আবেদনকারীদের অ্যাডভোকেট কে. এম. সাইফুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট মুশফিকুল আবরার।
প্রসঙ্গত, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক দাপ্তরিক বিজ্ঞপ্তিতে ২৭ সেপ্টেম্বর কর্মীদের জন্য বিশেষ দক্ষতা মূল্যায়ন পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি জানায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা ড. এম কামাল উদ্দিন জাসিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা আগামী শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, ১৪ আগস্টও মানবসম্পদ বিভাগ ২৯ আগস্ট এই ‘বিশেষ মূল্যায়ন পরীক্ষা’র তারিখ ঘোষণা করেছিল। তবে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ২১ আগস্ট এই পরীক্ষার বিপরীতে হাইকোর্টে রিট দাখিল করেন। এরপর ২৬ আগস্ট আদালত সেই রিট বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশের এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পুনরায় পরীক্ষা আয়োজনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।